Thursday, July 31, 2025

অকৃতজ্ঞ মানুষ চিনবেন কীভাবে? চেনার ১০টি উপায়ঃ

 প্রয়োজন ফুরোলেই নিঃশব্দ বিদায় - তারা আপনাকে খোঁজে যখন তাদের দরকার; আপনার পাশে দাঁড়ায় না - যখন আপনার দরকার।  


-জিএম কামরুল হাসান


অকৃতজ্ঞ মানুষ চিনবেন কীভাবে? চেনার ১০টি উপায়ঃ



1. তারা আপনার উপকারকে “স্বাভাবিক” ধরে নেয়। আপনি যা কিছু করেন, তা তাদের কাছে আপনার দায়িত্ব — কৃতজ্ঞতা জানানোর কিছু না।

2. “ধন্যবাদ” বা “Sorry” বলতে জানে না। ভুল করলেও ক্ষমা চায় না, বরং আপনার দোষ খুঁজে বের করে।

3. আপনার সফলতায় তারা খুশি হয় না। মুখে অভিনয় করে হাসলেও, মনে মনে হিংসা করে।

4. আপনার বিপদে পাশে থাকে না। যখন আপনি কষ্টে থাকেন, তারা চুপ থাকে বা উধাও হয়ে যায়।

5. একবার না বললেই আপনাকে ‘খারাপ’ বানায়। আগের সব উপকার ভুলে গিয়ে বলে — “তুমি বদলে গেছো।”

6. আপনার ব্যথাকে ছোট করে দেখে। আপনি কষ্টে থাকলেও তারা বলে, “এইসব তো হয়েই থাকে…”

7. আপনার দেওয়া ভালো জিনিস বা সহায়তাকে অবমূল্যায়ন করে। কখনো বলে না “তুমি পাশে ছিলে, বলে আমি পারছিলাম।”

8. তাদের প্রয়োজন শেষ হলে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। প্রয়োজন শেষ মানেই সম্পর্ক শেষ।

9. সবার কাছে আপনাকে ছোট করে। আপনার অনুপস্থিতিতে খারাপ মন্তব্য ছড়িয়ে দেয়।

10. নিজে কিছু না দিয়ে, সবসময় কিছু চায়। সম্পর্ক তাদের কাছে ‘দেওয়ার’ নয় — শুধু ‘নেওয়ার’ জায়গা।


…….. অতএব সাবধানে থাকি, সতর্ক থাকি – সহকর্মী বা বন্ধু নির্বাচনে….

Monday, July 14, 2025

রাসূল সা. ঘরে ছবি রাখতে এবং তা বানাতেও নিষেধ করেছেন।

 রাসূল সা. ঘরে ছবি রাখতে এবং তা বানাতেও নিষেধ করেছেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১৭৪৯)

আরেক হাদিসে হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জন্য প্রাণীর ছবিযুক্ত একটি বালিশ তৈরি করেছিলাম। যেন তা একটি ছোট গদী। এরপর তিনি আমার ঘরে এসে দুই দরজার মাঝখানে দাঁড়ালেন এবং তাঁর চেহারা মলিন হয়ে গেল। তখন আমি বললাম- ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমার কি অপরাধ হয়েছে? তিনি বললেন, এ বালিশটি কেন? আমি বললাম, আপনি এর উপর ঠেস দিয়ে বসতে পারেন এ বালিশটি সে জন্য আমি তৈরি করেছি।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ‘হে আয়িশা! তুমি কি জান না? যে ঘরে প্রাণীর ছবি থাকে, সেখানে (রহমতের) ফেরেশতা প্রবেশ করেন না! আর যে ব্যক্তি প্রাণীর ছবি আঁকে তাকে কেয়ামতের দিন শাস্তি দেয়া হবে! তাকে (আল্লাহ্) বলবেন, ‘তুমি যে প্রাণীর ছবি বানিয়েছ, এখন তাতে প্রাণ দান কর।’ (বুখারি)

হজরত সালিম রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, জিবরিল আলাইহিস সালাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাতের অঙ্গীকার করেছিলেন। কিন্তু তিনি আসেননি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাক্ষাত না করার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, ‘আমরা ওই ঘরে প্রবেশ করি না; যে ঘরে ছবি ও কুকুর থাকে।’ (বুখারি)

হাদিসের এই বাণীগুলো ঘরের সৌন্দর্য হিসেবে প্রাণী ছবি বা প্রতিকৃতি রাখতে নিরুৎসাহিত করে। এবং এটি পরকালে শাস্তির কারণ হিসেবে বিবেচিত। তাই ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করা উচিত সবার। এমন শোবিজ ব্যবহার করা উচিত সেখানে প্রাণীর ছবি বা প্রতিকৃতি নেই।

Monday, July 7, 2025

ইসলামী দৃষ্টিকোণে শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ উল্লেখ করা হলো:

 ইসলামে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষককে "আধ্যাত্মিক পিতা" হিসাবে গণ্য করা হয়, এবং শিক্ষার্থীদের কর্তব্য কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে নির্ধারিত। নিম্নে ইসলামী দৃষ্টিকোণে শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ উল্লেখ করা হলো:


---


### ১. **অভ্যন্তরীণ সম্মান ও শ্রদ্ধা (Internal Respect)**  

-

**দোয়া করা:**  

  > _"وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا"_  

  (সূরা আল-ইসরা ১৭:২৪)  

  — "এবং বল: হে আমার রব! তাদের উপর রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন।"  


---


### ২. **বাহ্যিক আদব-কায়দা (External Etiquette)**  

- **ক্লাসরুমে আদব:**  

 

  - কথা বলার সময় নম্র স্বর ব্যবহার ও দৃষ্টি নিচু রাখা।  

- **উপস্থাপন:**  

  - প্রশ্ন বা উত্তর জানতে চাইলে "স্যার/ম্যাডাম" বা "উস্তায/উস্তাযা" সম্মানসূচক সম্বোধন ব্যবহার।  

  - শিক্ষকের সামনে উচ্চস্বরে হাসা বা অপ্রয়োজনীয় আলোচনা থেকে বিরত থাকা।


---


### ৩. **জ্ঞানার্জনে আন্তরিকতা (Sincerity in Learning)**  

- **হাদীস:**  

  > _"إنما العلم بالتعلم"_ (বুখারি)  

  — "জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেই জ্ঞান লাভ হয়।"  

- শিক্ষকের দেওয়া জ্ঞান মনোযোগ সহকারে শোনা, নোট করা ও বাস্তবে প্রয়োগের চেষ্টা করা।  

- সংশয় থাকলে বিনীতভাবে জিজ্ঞাসা করা।


---


### ৪. **শিক্ষকের সেবা ও সহযোগিতা (Service & Cooperation)**  

- **ইতিহাসের উদাহরণ:**  

  ইমাম শাফিঈ (রহ.) তার শিক্ষক ইমাম মালিক (রহ.)-এর বাড়িতে ১৬ বছর সেবা করেছিলেন।  

- শিক্ষকের প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয় কাজে স্বেচ্ছায় সাহায্য করা (যেমন: বই সাজানো, শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করা)।


---


### ৫. **শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে সম্মান রক্ষা (Respect in Absence)**  

- **হাদীস:**  

  > _"ليس منا من لم يوقر كبيرنا..."_ (তিরমিযী)  

  — "যে আমাদের বড়দের সম্মান করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।"  

- শিক্ষকের **সমালোচনা বা গীবত না করা**।  

- তার ভুলত্রুটি গোপন রাখা।


---


### ৬. **দোয়া ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ (Dua & Gratitude)**  

- **কুরআন:**  

  > _"وَقُل رَّبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ"_ (সূরা নামল ২৭:১৯)  

  — "হে আমার রব! আমাকে তুমি এই তৌফিক দাও যে, আমি তোমার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করি।"  

- শিক্ষকের জন্য নিয়মিত দোয়া করা, বিশেষত পরীক্ষা সফল হলে বা জীবনে সাফল্য পেলে।


---


### ৭. **জ্ঞানকে বিকশিত করা (Preserving & Spreading Knowledge)**  

- শিক্ষকের কাছ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান নিজে আমল করা ও অন্যদের শেখানো।  

- **হাদীস:**  

  > _"بلغوا عني ولو آية" _ (বুখারি)  

  — "আমার পক্ষ থেকে (জ্ঞান) পৌঁছে দাও, যদি তা একটিমাত্র আয়াতও হয়।"


---


### ✅ **ইসলামী শিক্ষার স্বর্ণযুগের মূলনীতি:**  

ইমাম গাজ্জালী (রহ.) তার **"ইহইয়া উলুমুদ্দীন"** গ্রন্থে উল্লেখ করেন:  

> **"শিক্ষার্থীর প্রথম কর্তব্য শিক্ষকের প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা, যেমন মৃত ব্যক্তি গোসলদাতার হাতে আত্মসমর্পণ করে।"**


---


### সতর্কতা:  

শিক্ষক যদি ইসলামবিরোধী নির্দেশ দেন (যেমন: শিরক, হারাম কাজ), তবে তাকে **বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান** করা শিক্ষার্থীর দায়িত্ব (সূরা আল-আনকাবুত ২৯:৮)।


> 🌟 **শিক্ষকের মর্যাদা:**  

> রাসূল (ﷺ) বলেছেন,  

> **"নিশ্চয়ই আমি শিক্ষক হিসাবে প্রেরিত হয়েছি।"**  

> (ইবনে মাজাহ, হাদীস ২২৯)  

> এখানেই পেশাগত শিক্ষকতার মহিমা প্রতিষ্ঠিত হয়।


শিক্ষকতা হলো নবুওয়তের উত্তরাধিকারের পেশা। তাই এই সম্পর্কের পবিত্রতা রক্ষা করা ঈমানী দায়িত্ব।

একজন ছাত্র বা ছাত্রীর শিক্ষকের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ধরণ

 একজন ছাত্র বা ছাত্রী বিভিন্ন উপায়ে শিক্ষকের প্রতি তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারে। আন্তরিকতাপূর্ণ যেকোনো প্রকাশই শিক্ষকের জন্য আনন্দের। নিচে কিছু কার্যকর উপায় উল্লেখ করা হলো:

মুখের কথা ও আচরণে 🙏

সবচেয়ে সহজ এবং শক্তিশালী উপায় হলো আপনার আচরণ ও কথার মাধ্যমে কৃতজ্ঞতা দেখানো।

  • সরাসরি ধন্যবাদ দিন: ক্লাস শেষে বা শিক্ষকের সাথে দেখা হলে তার পড়ানোর পদ্ধতির প্রশংসা করুন। নির্দিষ্ট করে বলুন, "স্যার/ম্যাডাম, আজকের বিষয়টি আপনি খুব সুন্দর করে বুঝিয়েছেন, আমার অনেক উপকার হয়েছে।"

  • ক্লাসে মনোযোগী হন: শিক্ষকের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানোর অন্যতম সেরা উপায় হলো তার ক্লাসে মনোযোগী হওয়া, প্রশ্ন করা এবং আলোচনায় অংশ নেওয়া। এটি দেখায় যে আপনি তার শ্রমকে মূল্য দিচ্ছেন।

  • নিয়মানুবর্তী হোন: সময়মতো ক্লাসে আসা এবং সঠিক সময়ে বাড়ির কাজ জমা দেওয়াও এক ধরনের সম্মান প্রদর্শন।

  • সালাম/নমস্কার দিন: দেখা হলে সালাম বা নমস্কার দিয়ে কুশল জিজ্ঞাসা করা শ্রদ্ধাবোধের প্রকাশ।


লিখে প্রকাশ করা ✍️

কথার চেয়ে লেখা অনেক সময় বেশি স্থায়ী ও আন্তরিক হতে পারে।

  • চিঠি বা কার্ড: শিক্ষক দিবসে বা বছরের শেষে একটি হাতে লেখা চিঠি বা কার্ড উপহার দিন। চিঠিতে উল্লেখ করুন, তার কোন কথা বা শিক্ষা আপনার জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।

  • দলবদ্ধভাবে লেখা: ক্লাসের সবাই মিলে একটি বড় কার্ডে নিজেদের অনুভূতি লিখে শিক্ষককে দিলে তিনি অত্যন্ত খুশি হবেন।


ছোট উপহারের মাধ্যমে 🎁

উপহার মানেই দামী কিছু নয়, বরং এর পেছনের भावनाটাই আসল।

  • বই বা কলম: শিক্ষকের পছন্দের বিষয়ের কোনো বই বা একটি সুন্দর কলম হতে পারে চমৎকার একটি উপহার।

  • ফুল: একগুচ্ছ তাজা ফুল যেকোনো মানুষের মন ভালো করে দেয়।

  • হাতে বানানো জিনিস: নিজের হাতে বানানো কোনো জিনিস, যেমন একটি ছবি আঁকা বা কোনো ক্রাফট আইটেম, আন্তরিকতার সেরা উদাহরণ।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: মনে রাখবেন, দামি উপহারের কোনো প্রয়োজন নেই। অনেক সময় শিক্ষকরা এতে অস্বস্তি বোধ করতে পারেন। আপনার আন্তরিকতাই সবচেয়ে বড় উপহার।


দীর্ঘমেয়াদী সম্মান প্রদর্শন

শিক্ষাজীবন শেষ হয়ে গেলেও কৃতজ্ঞতা প্রকাশের সুযোগ থেকে যায়।

  • যোগাযোগ রাখা: স্কুল বা কলেজ ছাড়ার পরও বিশেষ দিনে (যেমন - ঈদ, পূজা, শিক্ষক দিবস) শিক্ষককে ফোন করে বা মেসেজ পাঠিয়ে খোঁজখবর নিন।

  • সাফল্য জানানো: জীবনে সাফল্য পেলে (যেমন - ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, চাকরি পাওয়া) শিক্ষককে তা জানান এবং তার অবদানের কথা স্বীকার করুন। একজন শিক্ষকের জন্য এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কিছু হতে পারে না।

  • তার শিক্ষা মেনে চলা: শিক্ষকের দেওয়া নৈতিক শিক্ষা ও পরামর্শ জীবনে মেনে চলাই হলো তার প্রতি শ্রেষ্ঠ কৃতজ্ঞতা।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ যেন আন্তরিক হয়। আপনার সামান্য একটু প্রচেষ্টা ও সম্মান প্রদর্শন একজন শিক্ষকের সারাদিনের ক্লান্তি দূর করে দিতে পারে।