ইসলামে শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষককে "আধ্যাত্মিক পিতা" হিসাবে গণ্য করা হয়, এবং শিক্ষার্থীদের কর্তব্য কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে নির্ধারিত। নিম্নে ইসলামী দৃষ্টিকোণে শিক্ষকের প্রতি শিক্ষার্থীদের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্যসমূহ উল্লেখ করা হলো:
---
### ১. **অভ্যন্তরীণ সম্মান ও শ্রদ্ধা (Internal Respect)**
-
**দোয়া করা:**
> _"وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا"_
(সূরা আল-ইসরা ১৭:২৪)
— "এবং বল: হে আমার রব! তাদের উপর রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবে লালন-পালন করেছেন।"
---
### ২. **বাহ্যিক আদব-কায়দা (External Etiquette)**
- **ক্লাসরুমে আদব:**
- কথা বলার সময় নম্র স্বর ব্যবহার ও দৃষ্টি নিচু রাখা।
- **উপস্থাপন:**
- প্রশ্ন বা উত্তর জানতে চাইলে "স্যার/ম্যাডাম" বা "উস্তায/উস্তাযা" সম্মানসূচক সম্বোধন ব্যবহার।
- শিক্ষকের সামনে উচ্চস্বরে হাসা বা অপ্রয়োজনীয় আলোচনা থেকে বিরত থাকা।
---
### ৩. **জ্ঞানার্জনে আন্তরিকতা (Sincerity in Learning)**
- **হাদীস:**
> _"إنما العلم بالتعلم"_ (বুখারি)
— "জ্ঞান অর্জনের মাধ্যমেই জ্ঞান লাভ হয়।"
- শিক্ষকের দেওয়া জ্ঞান মনোযোগ সহকারে শোনা, নোট করা ও বাস্তবে প্রয়োগের চেষ্টা করা।
- সংশয় থাকলে বিনীতভাবে জিজ্ঞাসা করা।
---
### ৪. **শিক্ষকের সেবা ও সহযোগিতা (Service & Cooperation)**
- **ইতিহাসের উদাহরণ:**
ইমাম শাফিঈ (রহ.) তার শিক্ষক ইমাম মালিক (রহ.)-এর বাড়িতে ১৬ বছর সেবা করেছিলেন।
- শিক্ষকের প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয় কাজে স্বেচ্ছায় সাহায্য করা (যেমন: বই সাজানো, শ্রেণিকক্ষ পরিষ্কার করা)।
---
### ৫. **শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে সম্মান রক্ষা (Respect in Absence)**
- **হাদীস:**
> _"ليس منا من لم يوقر كبيرنا..."_ (তিরমিযী)
— "যে আমাদের বড়দের সম্মান করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।"
- শিক্ষকের **সমালোচনা বা গীবত না করা**।
- তার ভুলত্রুটি গোপন রাখা।
---
### ৬. **দোয়া ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ (Dua & Gratitude)**
- **কুরআন:**
> _"وَقُل رَّبِّ أَوْزِعْنِي أَنْ أَشْكُرَ نِعْمَتَكَ"_ (সূরা নামল ২৭:১৯)
— "হে আমার রব! আমাকে তুমি এই তৌফিক দাও যে, আমি তোমার নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করি।"
- শিক্ষকের জন্য নিয়মিত দোয়া করা, বিশেষত পরীক্ষা সফল হলে বা জীবনে সাফল্য পেলে।
---
### ৭. **জ্ঞানকে বিকশিত করা (Preserving & Spreading Knowledge)**
- শিক্ষকের কাছ থেকে প্রাপ্ত জ্ঞান নিজে আমল করা ও অন্যদের শেখানো।
- **হাদীস:**
> _"بلغوا عني ولو آية" _ (বুখারি)
— "আমার পক্ষ থেকে (জ্ঞান) পৌঁছে দাও, যদি তা একটিমাত্র আয়াতও হয়।"
---
### ✅ **ইসলামী শিক্ষার স্বর্ণযুগের মূলনীতি:**
ইমাম গাজ্জালী (রহ.) তার **"ইহইয়া উলুমুদ্দীন"** গ্রন্থে উল্লেখ করেন:
> **"শিক্ষার্থীর প্রথম কর্তব্য শিক্ষকের প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা, যেমন মৃত ব্যক্তি গোসলদাতার হাতে আত্মসমর্পণ করে।"**
---
### সতর্কতা:
শিক্ষক যদি ইসলামবিরোধী নির্দেশ দেন (যেমন: শিরক, হারাম কাজ), তবে তাকে **বিনয়ের সাথে প্রত্যাখ্যান** করা শিক্ষার্থীর দায়িত্ব (সূরা আল-আনকাবুত ২৯:৮)।
> 🌟 **শিক্ষকের মর্যাদা:**
> রাসূল (ﷺ) বলেছেন,
> **"নিশ্চয়ই আমি শিক্ষক হিসাবে প্রেরিত হয়েছি।"**
> (ইবনে মাজাহ, হাদীস ২২৯)
> এখানেই পেশাগত শিক্ষকতার মহিমা প্রতিষ্ঠিত হয়।
শিক্ষকতা হলো নবুওয়তের উত্তরাধিকারের পেশা। তাই এই সম্পর্কের পবিত্রতা রক্ষা করা ঈমানী দায়িত্ব।
No comments:
Post a Comment